দূরবিনের দুরবিন
ইউনিস্টেলারের বানানো স্মার্ট টেলিস্কোপ ইকুইনক্স-১
যেকোনো আধুনিক দুরবিনের চারটা প্রধান অংশ থাকে: কালেক্টর, ডিটেক্টর, প্রসেসর ও মাউন্ট। আমাদের চোখের লেন্স হচ্ছে কালেক্টর যা আলো এক জায়গায় সংগ্রহ করে, রেটিনা হলো ডিটেক্টর যা আলোকে কেমিকেল সংকেতে রূপান্তরিত করে, মস্তিষ্ক হলো প্রসেসর যে সেসব কেমিকেল সংকেত প্রসেস করে দেখার অনুভূতি তৈরি করে, এবং পুরা শরীর হচ্ছে মাউন্ট যে লেন্স-রেটিনা-মস্তিষ্ককে ধারণ করে। আধুনিক টেলিস্কোপের ক্ষেত্রে ডিটেক্টর হয় সাধারণত একটা প্যারাবলিক মিরর যে সব আলো ফোকাল প্লেনে ফোকাস করে, ফোকাল প্লেনে থাকা সেন্সর (বা রিসিভার) হলো ডিটেক্টর যে আলোকে ইলেক্ট্রনে কনভার্ট করে, এবং এই সব ইলেক্ট্রন কেবলের মাধ্যমে একটা কম্পিউটারে পাঠানো হয় যে প্রসেসর হিসেবে কাজ করে। কালেক্টর-ডিটেক্টর সাধারণত একটা রোবোটিক মাউন্টের মধ্যে আঁটানো থাকে, প্রসেসর মাউন্টের মধ্যে থাকতে পারে তবে সাধারণত মাউন্টের বাইরে আলাদা জায়গায় থাকে।
আমাদের আউট্রিচ টেলিস্কোপ ইউনিস্টেলার কোম্পানির বানানো ইকুইনক্স ১-এর মধ্যে এই চার অংশই পাওয়া যায় যা ছবিতে দেখা যাচ্ছে। অপ্টিকেল টিউবের নিচের প্রান্তে মিরর, উপরের প্রান্তে সেন্সর, আর মাউন্টের ভার্টিকেল অংশটাতে কম্পিউটার আছে। মাউন্টের হরিজন্টাল অংশে আছে ব্যাটারি। মাউন্ট হরিজন্টাল এল্টিচুড এক্সিসে (টিউবের পাশে) ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত এবং ভার্টিকেল এজিমুথ এক্সিসে (ব্যাটারির নিচে) ৩৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘুরতে পারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। মোবাইল অ্যাপ থেকে সব কন্ট্রোল করা যায়। মোবাইলের সাথে টেলিস্কোপের রাস্পবেরি পাই কম্পিউটারের কানেকশন হয় ওয়াইফাই ও ব্লুটুথের মাধ্যমে। মাউন্টটা স্থাপন করতে হয় ট্রাইপডের উপর। মাউন্টকে আমাদের ঘাড়ের সাথে আর ট্রাইপডকে পায়ের সাথে তুলনা করা যায়। মাউন্টের মতোই ঘাড় থেকে মাথা হরিজন্টাল ও ভার্টিকেল এক্সিসে ঘুরতে পারে। আর ঘাড়-বুক থাকে ট্রাইপডের মতো পায়ের উপর। টেলিস্কোপের মতো আমাদের মাথা পুরা ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে পারে না, অনেক প্রাণীর মাথা অবশ্য পারে।
ইউনিভার্সিটির কাজের মতোই টেলিস্কোপ তিন ধরনের হতে পারে: রিসার্চ টিচিং ও আউট্রিচ। রেডিওতে লোফার, মিলিমিটারে আলমা, ইনফ্রারেডে জেমস ওয়েব, অপ্টিকেলে ভিএলটি, আল্ট্রাভায়োলেটে হিসাকি, এক্স-রেতে চন্দ্র, গামা-রেতে ফার্মি, এসব হচ্ছে রিসার্চ টেলিস্কোপ। বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট বা গ্র্যাজুয়েট কোর্স পড়ানোর জন্য যেসব ছোট অপ্টিকেল ও রেডিও দুরবিন ইউজ করা হয় সেগুলো টিচিং টেলিস্কোপ। আর আমাদের মতো শুধু আউট্রিচের কাজে যেসব ছোট ছোট দুরবিন ইউজ করা হয় সেগুলো আউট্রিচ দুরবিন। আউট্রিচ টেলিস্কোপ দিয়ে গবেষণা হয় না, পড়াশোনা হয় না, শুধু সকলের মন জোগানোর মাধ্যমে জাগানোর চেষ্টা করা হয়।